SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

Job

Write an essay in Bangla on জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য।

Created: 1 year ago | Updated: 9 months ago

জীবন ও স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য

ভূমিকাঃ মানুষের প্রধান মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য। বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্য দরকার তেমনি সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য ভেজালবিহীন খাদ্য বা নিরাপদ খাদ্য অপরিহার্য। 

নিরাপদ খাদ্যঃ আধুনিক জীবনে শিল্পজাত খাদ্য একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এ খাদ্যকে স্বাভাবিক এবং ভেজাল ও অন্যান্য দূষণ থেকে নিরাপদ অবস্থায় বিতরণ এখন একটি বিশ্ব সমস্যা। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়াও নানা কারণে খাদ্য দূষিত হতে পারে। খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, পরিবহণ, খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়ার যেকোন পর্যায়ে শিল্পায়িত খাদ্য খাদ্যের অনুপযোগী হতে পারে। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার দ্বার পর্যন্ত খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত রাখা একটি বড় সরকারি ও বেসরকারি দায়িত্ব ।

খাদ্যশিল্পের দায়িত্ব উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানসমূহ এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আধুনিক মান নির্ধারণ ব্যবস্থাপনা করতে আইনগতভাবে বাধ্য। এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার প্রধান তিনটি পদ্ধতি হলোঃ

উত্তম উৎপাদন পদ্ধতিঃ উত্তম উৎপাদন পদ্ধতির আওতায় ঐ সমস্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যার ফলে খাদ্যের সংগতিপূর্ণ মানসহ নিরাপদের বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রমান রয়েছে। প্রক্রিয়াজাতজনিত সংকট নির্ধারণ এবং এর প্রতিটি ধাপের নিয়ন্ত্রণ (Hazard Analysis Critical Control Points বা সংক্ষেপে HACCP). খাদ্যের মান ও এর নিরাপদ হওয়ার বিষয়টি সনাতনী পদ্ধতির দৃষ্টিকোণ প্রক্রিয়াকৃত খাদ্যের মধ্যেই সীমিত ছিল। HACCP সাম্প্রতিক কালে উদ্ভাবিত একটি সক্রিয় কারিগরি পদ্ধতি। এ পদ্ধতি প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতিটি পর্যায়ে সম্ভাব্য সমস্যা ও তা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

মান নিশ্চয়তার বিধানঃ আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণ সংস্থা (International Standards Organization ISO 9000) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ধারিত মানের (BU 29000) মাধ্যমে খাদ্য শিল্পের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানসমূহ এই দুটি সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। এ ধরণের কর্মসূচির কার্যকারিতা নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ দ্বারা নিয়মিতভাবে মূল্যায়িত হয়।

নিরাপদ খাদ্য ক্রয়ে ভোক্তা অধিকার ও বাংলাদেশঃ পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতার বিশেষ কিছু অধিকার রয়েছে। ক্রেতাদের সকল অধিকার আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক ব্যক্তিই একজন ভোক্তা। ১৯৬০ সালের এপ্রিল মাসে হল্যান্ডের হেগ নগরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম প্রভৃতি দেশের ক্রেতা সংগঠনের উদ্যোক্তাদের এক সম্মেলন। এ সম্মেলনেই গঠিত হয় আন্তর্জাতিক ক্রেতা সংগঠন 'ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব কনজুমারস ইউনিয়ন' (আইওসিইড)। আইওসিইউ দ্বারা স্বীকৃত ৭টি ভোক্তা অধিকার হলোঃ

০১. নিরাপত্তার অধিকার।
০২. জানার অধিকার। 
০৩. অভিযোগ ও প্রতিনিধিত্বের অধিকার।
০৪. ন্যায্যমূল্যে পছন্দসই পণ্য কেনার অধিকার।
০৫. ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার।
০৬. ক্রেতার শিক্ষালাভের অধিকার। 
০৭. স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অধিকার

বাংলাদেশে ক্রেতাদের যে অধিকার রয়েছে এ সম্পর্কেই তাদের কোন ধারণা নেই। তাছাড়া কোনো পণ্য সম্পর্কে অভিযোগ করতে অধিকাংশ সময় কোনো সুফল পাওয়া যায় না। কোনো পণ্য ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ ক্রেতা যদি আইনের আশ্রয় নিতে যায় তবে সে তো ক্ষতিপূরণ পায়ই না বরং সে আরো ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রেতার অধিকারের ব্যাপারে সুফল আসছে, এর জন্য করছে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্বঃ খাদ্য হলো প্রাণশক্তি। খাদ্য ছাড়া কোনো প্রাণিই বাঁচতে পারে না। সেই খাদ্যের গুরুত্ব অনুধাবেনর জন্য প্রতিবছরের ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস পালন করা হয়। ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ গঠনের পর থেকে ১৯৭৯ সালে এর ২০তম সাধারণ পরিষদের কনফারেন্সে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ফুড এ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশেন (FAO) গঠন করা হয়। বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ওয়ার্ল্ডফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি), ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট (আইএফএডি-ইফাদ) গঠন করা হয়েছে। পরে ইতালির রোমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে FAO এর সদর দপ্তর।

আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটির ওপরে। এতে বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যাকে অন্ন প্রদানের জন্য যত কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে হলো অন্ন। তাই তো কবির কথায় বেজে ওঠে “জোটে যদি একটি পয়সা খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি, জোটে যদি দুটো পয়সা ফুল কিনে নিও হে অনুরাগী”। কারণ বাঁচতে হলে খেতে হবে। খাওয়া ছাড়া একজন মানুষের সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ বেঁচে থাকার রেকর্ড রয়েছে। তার বেশি নয়। মানুষের খাবারের মধ্যে ছয়টি উপাদান অপরিহার্য। আমিষ, শর্করা, স্নেহ, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি এই ছয়টি খাদ্যোপাদান সমৃদ্ধ খাবারকে আদর্শ বা সুষম খাবার বলা হয়। তাই জীবনকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে এই সব খাবারের কোন বিকল্প নেই। সুতরাং বলা যায় যে, জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষার নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম ।

বিএসটিআইঃ বিভিন্ন ধরণের পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রদান, মান নিয়ন্ত্রণ এবং ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। শিল্প খাদ্য ও রাসায়নিক পণ্যের মান নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ বিএসটিআই এর প্রধান কাজ, তাছাড়া দেশব্যাপি সরকার নির্ধারিত ওজনের বিষয়টিও তারা প্রয়োগ করে। ঢাকাস্থ সদর দপ্তর কার্যালয় দ্বারা সকল বিভাগে বিএসটিআই কার্য পরিচালনা করে। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএসটিআই পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, অনুমোদন ও ভেজাল রোধে কাজ করে যাচ্ছে।

উপসংহারঃ বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে অবশ্যই খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, কারণ খাদ্য গ্রহণ করা ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। আর জীবনকে সুস্থ রাখতে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নাই, তাই পরিশেষে বলা যায় যে, জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষায় নিরাপদ খাদ্য অপরিহার্য।

9 months ago

বাংলা

Please, contribute to add content.
Content

Related Question

View More

একজন লেখক তিনিই যিনি লেখেন। তবে সব লেখা লিখেই লেখক হওয়া যায় না। লেখক সব ধরনের হতে পারে। তবে সৃজনশীল লেখকই হচ্ছে আমাদের মূল কেন্দ্রবিন্দু। লেখক হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম একটি স্বাধীন সত্ত্বা।

একজন লেখক পুরোপুরি তার নিজের সত্ত্বার ওপরে বেঁচে থাকে। অনেকেই লেখক হবার সহজ উপায় খোঁজ করে। কিন্তু পড়তে পড়তে আর লিখতে লিখতেই শুধুমাত্র লেখক হওয়া যায়। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। লেখক অনেক ধরনের হতে পারে।

একজন সাংবাদিকও একজন লেখক। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, ছড়া, সাহিত্য, প্রবন্ধ, রম্য, ব্লগ সব ধরনের লেখা যারা লেখে তারাই লেখক। অনেকেই মস্তিষ্কের মধ্যে ওকটা লেখার শক্তি পেয়ে যায় আর অনেকে হয়ত শিখে শিখে লেখক হয়।

সমাজ সভ্যতা কখনোই পুরোপুরি একজন লেখকের পক্ষে থাকে না। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিপক্ষে চলে যায়। স্বাভাবিকভাবেই একজন লেখক তার কলমের আঘাতে জর্জরিত করতে চায় সকল অন্যায়, অপবাদ। তাই হয়ত বেঁধে যেতে পারে সংঘাত। কলমই হচ্ছে একজন লেখকের দাঁড়ানোর জায়গা। কলম ছাড়া লেখকের অস্তিত্ব বিলীন। তবে সবাইকে যে প্রতিবাদ লিখতে হবে এমন কোনো কথা। কেউ কেউ মনোরঞ্জনের জন্যও লেখে। অনেকে আবার চাটুকারিতা করতে লেখে। কেউ আবার কীভাবে পুরষ্কার তুলে নেওয়া যায় সেই ধান্দা করার জন্য লেখে।

একজন লেখক হয়ে উঠতে পারে ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্যকারী। সে কলমের ছোঁয়ায় প্রতিবাদ করতে অন্যায়ের আর ফুটিয়ে তুলবে ন্যায়ের কথা। লেখকের কলমের কালি প্রেরণার সুর হয়ে গান গাইবে। আর অশ্রুসিক্ত নয়নে হাসির ঝলক আনবে লেখকের কলম। একজন লেখকের প্রাণ তার লেখা, তার লেখার ভঙ্গি। সে তার লেখা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে পারবে অসুস্থ কোনো সভ্যতাকে। লেখক তার কলম দিয়ে জাগ্রত করতে পারবে মানুষের ভীতরে লুকিয়ে থাকা অদম্য সাহস।

একজন লেখক কল্পনাকে নিয়ে আসতে পারে বাস্তবে। আমাদের নিয়ে যেতে পারে কল্পনার গহীন বনে। লেখক আমাদের সবাক যুগ থেকে অবাক যুগে নিয়ে যেতে পারে মুহূর্তের মাঝেই। লেখক জাগাতে পারে প্রেম, লেখক জাগাতে পারে নতুন কাজের স্পৃহা।

অনেকেই মনে করে লেখকের সকল বিষয়ে দ্বায় আছে। কিন্তু লেখকের মূলত কারো কাছেই কোনো দ্বায় নেই। তার দ্বায় থাকে শুধু নিজের মনের কাছে, নিজের বিবেকের কাছে, নিজের সুপ্ত চেতনার কাছে। সমাজ কি ভাববে তা নিয়ে লেখক মাথা ঘামাবে না। লেখক ভয়ে নাথা নোয়াবে না। লেখক যতদিন বাঁচবে বীরের মতোই বাঁচবে।

সারা বিশ্বেই লেখকরা নির্যাতনের শিকার হয়। অনেকেই বলে থাকে লিখে কিছুই হয় না। তাই যদি হতো তাহলে লেখার জন্য লেখকের শাস্তি হতো না। লেখকের ফাঁসি হতো না।

লেখকের কলমে অনেক জোর। সেই জোর ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিতে পারে যেকোনো কিছু। বিশেষ করে সাংবাদিকরা বিশ্বজুড়ে নির্যাতিত হয় অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে। শাস্তি, সাজা বহু কিছু তাদের সহ্য করতে হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখলে হুমকি আসে, হামলা মামলা বহু ঘটনাই ঘটে। কারণ শাসক, শোষক আর অন্যায়কারীদের অনেক ক্ষমতা। লেখকের সমাজের দায়মুক্তির জন্য জীবনও দিতে হয়। তাইতো একজন লেখক সমাজের শক্তি, সমাজের সম্পদ।

1 year ago

সাহিত্য হচ্ছে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি তথা মানব-অভিজ্ঞতার কথা বা শব্দের বাঁধনে নির্মিত নান্দনিক বহিঃপ্রকাশ। এই অর্থে গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি উচ্চতর গুণাবলি সমন্বিত বিশেষ ধরনের সৃজনশীল মহত্তম শিল্পকর্ম। সাহিত্য-শিল্পীগণ যখন ‘অন্তর হতে বচন আহরণ’ করে আত্মপ্রকাশ কলায় ‘গীতরস ধারা’য় সিঞ্চন করে ‘আনন্দলোকে’ নিজের কথা- পরের কথা- বাইরের জগতের কথা আত্মগত উপলব্ধির রসে প্রকাশ করেন- তখনই তা হয়ে ওঠে সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের কথায় “বহিঃপ্রকৃতি এবং মানব-চরিত্র মানুষের মধ্যে অনুক্ষণ যে আকার ধারণ করিতেছে, যে-সঙ্গীত ধ্বনিত করিয়া তুলিতেছে, ভাষা-রচিত সেই চিত্র এবং সেই গানই সাহিত্য।…সাধারণের জিনিসকে বিশেষভাবে নিজের করিয়া – সেই উপায়ে তাহাকে পুনরায় বিশেষভাবে সাধারণের করিয়া তোলাই হচ্ছে সাহিত্যের কাজ।” [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাহিত্য] সাহিত্য সত্য-সুন্দরের প্রকাশ হিসেবে প্রবহমাণ সময়ে যা ঘটে – সে-সবের মধ্য থেকে যা মহৎ, যা বস্তুসীমাকে ছাড়িয়ে বাস্তবাতীত প্রকাশ করে, যা জীবনের জন্য কল্যাণময় এবং মহৎ আদর্শের দ্যোতক তাকেই প্রকাশ করে। আসলে মহৎ সাহিত্য তাই- যা একাধারে সমসাময়িক-শাশ্বত-যুগধর্মী-যুগোপযোগী-যুগোত্তীর্ণ। সাহিত্য কেবল পাঠককে আনন্দ দেয় না- সমানভাবে প্রভাবিত করে পাঠক এবং সমাজকে।

আভিধানিকভাবে ‘সহিতের ভাব’ বা ‘মিলন’ অর্থে ‘সাহিত্য’ হলো কাব্য, নাটক, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি সৃজনশিল্পের মাধ্যমে এক হৃদয়ের সঙ্গে অন্য হৃদয়ের সংযোগ স্থাপন; সাহিত্য¯্রষ্টা-সাহিত্যের সাথে পাঠকের এক সানুরাগ বিনিময়। কিন্তু আভিধানিক অর্থের নির্দিষ্ট সীমায় সাহিত্যের স্বরূপ-গতি-প্রকৃতি-বৈচিত্র্য ও বিস্তৃতির সম্যক ধারণা দেওয়া যেমন অসম্ভব, কোনো বিশেষ সংজ্ঞায় তাকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়াও তেমন দুঃসাধ্য। বাচ্যার্থ ও ব্যঞ্জনার্থর সীমাকে অতিক্রম করে নানা রূপে, রসে, প্রকরণ ও শৈলীতে সাহিত্যের নিরন্তর যাত্রা সীমা থেকে অসীমে। প্রত্যক্ষ সমাজপরিবেশ তথা সমকালীন বাস্তব পারিপার্শ্বিক, নিসর্গপ্রীতি ও মহাবিশ্বলোকের বৃহৎ-উদার পরিসরে ব্যক্তিচৈতন্য ও কল্পনার অন্বেষণ ও মুক্তি- আর এইভাবেই শ্রেণিবিভাজন, নামকরণ ও স্বরূপমীমাংসার প্রচেষ্টাকে ছাপিয়ে উঠে সাহিত্যের যাত্রা সীমাহীনতায়। প্রকৃত সাহিত্য তাই যেমন তার সমসময় যা যুগমুহূর্তের, তেমনই তা সর্বকালের সর্বজনের। মার্কসবাদী সাহিত্যতত্ত্বে বাস্তব সমাজজীবনকে ‘ভিত্তি’ আর শিল্প-সাহিত্যকে সমাজের উপরিকাঠামোর [ঝঁঢ়বৎংঃৎঁপঃঁৎব] অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। সাহিত্যের মৌল উপকরণসামগ্রী আহৃত হয় জীবনের ভা-ার থেকে- সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বৈরিতার বিচিত্র-অনিঃশেষ ভা-ার থেকে। সাহিত্যসৃষ্টির মূলে সক্রিয় যে সৃজনী-ব্যক্তিত্ব তা নিছক বিমূর্ত কোনো সত্তা নয়; আত্মপ্রকাশ ও মানবিক সংযোগ ও বিনিময়ের বাসনায় অনুপ্রাণিত সে সত্তা তার ভাব-ভাবনা, বোধ ও বিশ্বাসকে এক আশ্চর্য কৌশলে প্রকাশ করে জনসমক্ষে কোনো একটি বিশেষ রূপ-রীতি-নীতির আশ্রয়ে। ব্যক্তিক অনুুভূতি-যাপিতজীবন-মিশ্রকল্পনার জগৎ থেকেই সৃষ্টি হয় সাহিত্যের; যুগান্তরের আলোকবর্তিকা হিসেবে সাহিত্য সত্যের পথে সবসময় মাথা উঁচু করে থেকেছে- সত্যকে সন্ধান করেছে। আসলে সাহিত্য এমনি এক দর্পণ- যাতে প্রতিবিম্বিত হয় মানবজীবন, জীবনের চলচ্ছবি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, সমাজজীবনে ঘটমান ইতিহাস- ইতিহাসের চোরাস্রােত নানাবিধ কৌণিক সূক্ষ্মতায়।

সাধারণত আত্মপ্রকাশের বাসনা, সমাজ-সত্তার সঙ্গে সংযোগ কামনা, অভিজ্ঞতার আলোয় কল্পলোক নির্মাণ এবং রূপপ্রিয়তা- এই চতুর্মাত্রিক প্রবণতাই মানুষের সাহিত্য-সাধনার মৌল-উৎস। চতুর্মাত্রিক প্রবণতার [আত্মপ্রকাশের কামনা, পারিপার্শ্বিকের সাথে যোগাযোগ বা মিলনের কামনা, কল্প-জগতের প্রয়োজনীয়তা এবং সৌন্দর্য-সৃষ্টির আকাক্সক্ষা বা রূপমুগ্ধতা] মধ্যে সমাজসত্তার সঙ্গে সংযোগ-কামনা এবং অভিজ্ঞতার আলোয় কল্পলোক নির্মাণ- এই উৎসদ্বয়ের মধ্যে নিহিত রয়েছে সাহিত্য ও সমাজের মধ্যে আন্তর-সম্পর্কের প্রাণ-বীজ। সমাজ শিল্পীকে সাহিত্য-সাধনায় প্রণোদিত করে। ‘সহৃদয়-হৃদয় সংবাদ’এর মাধ্যমে সাহিত্যিকগণ লেখক-পাঠকের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেন- উভয়ের হৃদয়বীণার তারগুলোকে একই সুতায় গেঁথে দেন। এর কারণে সাহিত্য দেশ-কাল-সমাজের সীমা অতিক্রম করে সর্বসাধারণের হৃদয়কে আকর্ষণ করে। এর ফলে সাহিত্য হয়ে ওঠে সার্বজনীন-সর্বকালের মানুষের হৃদয়ের সামগ্রী এবং সাহিত্য¯্রষ্টাও হয়ে ওঠেন অনেক বড়। কিন্তু বর্তমান বাংলা সাহিত্যচর্চার গতি-প্রকৃতি, সমস্যা-সংকট-সমাধান কোন দিকে? এসব বিষয়ের সন্ধান- এ প্রবন্ধের অন্বিষ্ট।

1 year ago

আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধটি আমাদের লোককৃষ্টি গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে। লেখক এ প্রবন্ধে বাংলাদেশের লোকশিল্প ও লোক-ঐতিহ্যের বর্ণনা দিয়েছেন । এ বর্ণনায় লোকশিল্পের প্রতি তার গভীর মমত্ববোধের পরিচয় রয়েছে।
আমাদের নিত্যব্যবহার্য অধিকাংশ জিনিসই এ কুটিরশিল্পের ওপর নির্ভরশীল ।

শিল্পগুণ বিচারে এ ধরনের শিল্পকে লোকশিল্পের মধ্যে গণ্য করা যেতে পারে । পূর্বে আমাদের দেশে যে সমস্ত লোকশিল্পের দ্রব্য তৈরি হতো তার অনেকগুলোই অত্যন্ত উচ্চমানের ছিল। ঢাকাই মসলিন তার অন্যতম। ঢাকাই মসলিন অধুনা বিলুপ্ত হলেও ঢাকাই জামদানি শাড়ি অনেকাংশে সে স্থান অধিকার করেছে।

বর্তমানে জামদানি শাড়ি দেশে-বিদেশে পরিচিত এবং আমাদের গর্বের বস্তু। নকশি কাথা আমাদের একটি গ্রামীণ লোকশিল্প। এ শিল্প আজ বিলুপ্তপ্রায় হলেও এর কিছু কিছু নমুনা পাওয়া যায়। আপন পরিবেশ থেকেই মেয়েরা তাদের মনের মতো করে কীথা সেলাইয়ের অনুপ্রেরণা পেতেন । কাঁথার প্রতিটি সুচের ফোঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক-একটি পরিবারের কাহিনী, তাদের পরিবেশ, তাদের জীবনগাঁথা ।

আমাদের দেশের কুমোরপাড়ার শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ছাড়াও পোড়ামাটি দিয়ে নানা প্রকার শৌখিন দ্রব্য তৈরি করে থাকে। নানা প্রকার পুতুল, মূর্তি ও আধুনিক রুচির ফুলদানি, ছাইদানি, চায়ের সেট ইত্যাদি তারা গড়ে থাকে।
খুলনার মাদুর ও সিলেটের শীতলপাটি সকলের কাছে পরিচিত। আমাদের দেশের এই যে লোকশিল্প তা সংরক্ষণের দায়িত আমাদের সকলের । লোকশিল্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারি।

1 year ago

আমাদের অর্থনৈতিক সম্পদ

 

বাংলাদেশ, একটি দ্রুত উন্নতি লক্ষ্য নির্ধারণ করা দেশ, যা প্রচুর অর্থনৈতিক সম্পদের বেশিরভাগ সম্পদ নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই দেশের অর্থনৈতিক সম্পদ মৌলিকভাবে চারটি প্রধান উৎস থেকে আসে: জমি, কাজ, উদ্যোগ, এবং মানুষের কাজের দক্ষতা। এই সম্পদের বিকাশে বিভিন্ন রাজনৈতিক, আর্থিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের ভূমিকা রয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদের মূল স্তম্ভ হল কৃষি। দেশটি একটি প্রধানত কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির মূল হিসেবে প্রধানত শস্য ও ফসল চাষ প্রসঙ্গে বিকাশ হয়েছে। বাংলাদেশে প্রধানত ধান, পাট, মশুর ডাল, আখ, পটল, পেঁপে, তেল সহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। অত্যন্ত উচ্চ মানের খাদ্য সামগ্রী উৎপাদনের ফলে এই খাদ্য পণ্য রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক সম্পদের গড়াতে সাহায্য করে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উৎস হল প্রবৃদ্ধি ও শিক্ষাগত উন্নতি। বাংলাদেশে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব কমে আসছে এবং মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি করছে। বিশেষত, প্রযুক্তির আগমন এবং বিনিয়োগে বৃদ্ধি নেওয়া হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক সম্পদের উন্নতির পথে সাহায্য করছে।

অন্যান্য উৎস হিসেবে প্রযুক্তিবিদ্যা এবং সেবা অংশ গুলির অগ্রগতি আছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সম্পদ হল তার মানুষের চাকরিভার্থী শ্রমিকেরা। তাদের দক্ষতা, উদ্যোগ, ও সামর্থ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

যদিও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদ উন্নতির পথে অনেক উত্সাহজনক প্রগতি হয়েছে, তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ র

য়েছে। প্রধানতঃ গরিব মানুষের জন্য আর্থিক সম্পদের অগ্রগতি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনও বেশিরভাগ লোকের মধ্যে বৃদ্ধির অভাব আছে। তাছাড়া, পরিবেশের সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সঠিক প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা প্রয়োজন।

পুনর্নির্মাণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পদের বিস্তার ও উন্নতি নিশ্চিত করতে পারে। সঠিক নীতি নির্ধারণ, উদ্যোগের বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত প্রবর্তন এবং শিক্ষাগত উন্নতি এমন পরিবর্তন নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে।

শেষ কথায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পদ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা দেশটির সমৃদ্ধি ও উন্নতির সাথে অবিভাজ্যভাবে সংযোগিত। একটি দ্রুত বৃদ্ধির উপায় হল সঠিক পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা এবং উদ্যোগের বৃদ্ধি করা। এই প্রস্তুতি নেওয়ার মাধ্যমে, বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক সম্পদ উন্নতির পথে আরও এগিয়ে যেতে পারে এবং তার মানুষের জন্য আরো উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে।

2 months ago